সেলিম আহমেদ ডেস্ক রিপোর্টঃঃ ঢাকায় থেকে কী করবো?’
কদিন পরেই লকডাউন’র বিধিনিষেধ বাড়িয়ে সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হবে, এমন শঙ্কায় রাজধানী ছাড়ছে মানুষ। শনিবার (২৬ জুন) রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল ও আমিন বাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ। নিরুপায় হয়ে অনেকেই রাজধানী ছাড়ছেন। করোনাকালীন সময় কেউ হারিয়েছেন চাকরি, কিংবা রাজধানীতে কাজের সন্ধানে এসে এখন শূন্য হাতে ফিরছেন।
মাসখানেক আগে গাইবান্ধা থেকে থেকে রাজধানীতে কাজের সন্ধানে এসেছিলেন রাজমিস্ত্রি আশরাফুল। কিন্তু ঢাকায় বর্তমানে কনস্ট্রাকশনের কাজ তেমন না হওয়ায়, কী করবে কিছু ভেবে পাচ্ছিলেন না। এদিকে করোনা সংক্রমণ রোধে লকডাউন দেওয়ায় বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। আশরাফুল বলেন, মাসখানেক তেমন কাজ না থাকায় রাজধানীতে দেখেছি অনেক কষ্ট হয়েছে। সামনে তো সবকিছু বন্ধ থাকবে কাজ হবে না। সেজন্য ঢাকা থেকে কী করব? বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। তবে বাস না থাকায় যতটুকু সম্ভব হেঁটে যাওয়া যায়। সামনে কিছু পেলে ভেঙে ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করব। হাতে টাকা পয়সাও তেমন নেই।’
এসময় কথা হয় নওগাঁ থেকে রাজধানীতে কাজের সন্ধানে আশা হাফিজের সঙ্গে। তার চোখে-মুখেও যেন বিষাদের সুর। যে আশায় রাজধানীতে এসেছিলেন, সেটা পুরোই ফিকে হয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাড়ি থেকে ভেবেছিলাম ঢাকা শহরে এসে কিছু একটা করতে পারবো। কিন্তু শহরে অনেক জায়গাতেই কাজকর্ম নাই। এই কয়েকদিন অনেক কষ্টে কাটিয়েছি। সামনে যদি সবকিছু বন্ধ থাকে তাহলে আরও বেশি সমস্যায় পড়বো। তাই কষ্ট হলেও ভেঙে ভেঙে বাড়ি চলে যাবো।’
রাজধানীর একটি বাসায় সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতেন শাকিল। সম্প্রতি ছাঁটাইয়ের তালিকায় পড়ায় চাকরি থেকে ইস্তফা দেওয়া হয় তাকে। সামনে লকডাউন কীভাবে কী করবেন তা ভেবে পাচ্ছিলেন না। তাইতো একদিকে চাকরি হারানো অন্যদিকে কীভাবে চলবেন তা নিয়ে শঙ্কা। এত কিছু চিন্তা ভাবনার পর তিনিও রাজবাড়ী যাওয়ার জন্য আমিন বাজার ব্রিজ এলাকায় অপেক্ষায় ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার কাছে টাকাপয়সা তেমন নেই। প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসের যত ভাড়া চাচ্ছে সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি কিছু দূর হেঁটে ভেঙে ভেঙে ঘাট পর্যন্ত যেতে যাব।’
করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা যাচ্ছিলেন গ্রামের বাড়ি। কোথায় যাচ্ছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘করোনার কারণে স্কুল কলেজ বন্ধ। আমরা অনলাইনে ক্লাস নিতাম। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন না পাওয়ার অজুহাতে চাকরি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন তো হাত একেবারে খালি। বাড়ি গিয়ে টুকটাক কিছু করার চেষ্টা করব। আর চাকরি না থাকায় থাকা খাওয়াও অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। আর সামনে লকডাউন দিলে সকাল থেকে না খেয়ে কষ্ট করতে হবে।’
সম্প্রতি উত্তরার একটি গার্মেন্টস থেকে ছাঁটাই হোন শিহাদ হোসেন। চাকরি হারানোর পর মাঝে কয়েকদিন গ্রামে গিয়ে থেকেছেন। কিন্তু দু’একটা চাকরির বিষয়ে ৫ দিন আগেই তিনি রাজধানীতে এসেছেন। এক জায়গায় ইন্টারভিউ দিয়েছেন, কিন্তু এখনও ফাইনালি কিছু জানায়নি। তিনি বলেন, আগে যে মেসে ছিলাম, সেটা ছেড়ে দিতে হয়েছে। এখন এক আত্মীয়ের বাড়িতে ওঠেছি। সামনে লকডাউন হলে সমস্যায় পড়তে হবে। সেজন্য নিজেই মোটরবাইক নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি। যাবার সময় যদি দুই একজন যাত্রী পাই তাহলে রাস্তার ও মোটরবাইকের তেলের খরচ কিছুটা মেটানো সম্ভব হবে।’